Ad Code

Responsive Advertisement

ভ্যালেন্টাই'স ডে এর প্রথা, মিথ ও কুসংস্কার

আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন'স ডে। এর বাংলা অর্থ ভালোবাসা দিবস। কিন্তু কী এ ভ্যালেন্টাইন? আর কেনই-বা পালন করা হয় তা? আর এ ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রথা-মিথ আর কুসংস্কার তুলে ধরা হয়েছে আমাদের এ আয়োজনে।


ভ্যালেন্টাইন'স ডে’র ইতিহাস ড্যালেন্টাইন'স ডে উদযাপন শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে। প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেবদেবীদের রানী জুনোর সম্মানে পবিত্র দিন। রোমানরা তাকে নারী ও বিবাহের দেবী বলে বিশ্বাস করত। দিনটি অনুসরণ করে পরের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি পালিত হতো লুপারকেলিয়া উৎসবের বিশেষ ভোজ। সে সময় তরুণ এবং তরুণীদের জীবনযাপন ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ পৃথক। সম্রাট কডিয়াসের শাসনামলে রোম কয়েকটি জনবিরোধী এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। হিংস্র প্রকৃতির কড়িয়াস সে সময় তার সেনাবাহিনীতে যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্য ভর্তি না হওয়া নিয়ে খুব কঠিন সময় পার করছিলেন। রোমান পুরুষদের তাদের পরিবার ও ভালোবাসা ত্যাগ করে যুদ্ধে না যাওয়াকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছিলেন তিনি। ফলে কডিয়াস সমগ্র রোমে সব ধরনের বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সে সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন রোমের একজন ধর্মযাজক ছিলেন। তিনি এবং সেন্ট ম্যারিয়াস খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তরুণ-তরুণীদের গোপনে বিয়ে দিতেন এবং বিবাহিত যুগলদের সহযোগিতা দিতেন। এ কারণে রোমের ম্যাজিস্ট্রেট তাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দি করেন। ভ্যালেন্টাইন বন্দি থাকা অবস্থায় অনেক তরুণ তাকে দেখতে যেত এবং কারাকক্ষের জানালা দিয়ে তার উদ্দেশ্যে লেখা চিরকুট ও ফুল দিয়ে তাদের ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত । হাত নেড়ে তাকে জানাত যে, তারা ‘যুদ্ধ নয়, ভালোবাসায় বিশ্বাসী। এদের মধ্যে একজন ছিল কারারক্ষীর মেয়ে। তার বাবা তাকে ভ্যালেন্টাইনের সাথে সাক্ষাৎ করতে এবং তার সাথে কথা বলতে সুযোগ করে দিত। মেয়েটি তাকে তার প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কডিয়াসের নির্দেশ অমান্য করে তরুণ-তরুণীদের গোপনে বিয়ে দেয়া এবং ভালোবাসায় তার সমর্থনের কথা জানায়। এক সময় তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে যায়। 

ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করে হত্যার দিনে তিনি মেয়েটিকে তার বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস নিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে যান। এতে তিনি লিখেছিলেন, ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন'। বিচারকের নির্দেশ অনুসারে সে দিনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এ আত্মত্যাগের দিনটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে লুপারকেলিয়া অনুষ্ঠানের দিন ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের পরিবর্তে ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেন। পরে এটি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে ‘ভ্যালেন্টাইন'স ডে’ নামে দ্রুত পরিচিতি লাভ করে। কালের ধারাবাহিকতায় ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে ভ্যালেন্টাইন ডে এবং সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাহারি ফুল, কবিতা ও ছোটখাট উপহার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে দিনটি ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিস্ এস্থার হাওল্যান্ড প্রথম ভ্যালেন্টাইন কার্ড পাঠানোর প্রচলন করেন। 


কুসংস্কার আজ থেকে শতবর্ষ আগে ব্রিটেনে ছোট শিশুরা দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি গান গেয়ে দিনটি উদযাপন করত। ওয়েলসে কাঠের তৈরি চামচের ওপর হৃৎপিণ্ড, তালা, শেকল প্রভৃতির নকশা খোদাই করে এ দিনে উপহার দেয়া হতো। এর মানে ছিল ‘ইউ’আনলক মাই হার্ট।' কোথাও আবার এ দিনে তরুণীরা রোদে একটি বাটিতে পরিষ্কার পানি রেখে তার ওপর চেয়ে থাকত। ধারণা করা হতো, যার ছবি ওই পানিতে ভেসে উঠবে সে-ই হবে তার কাঙ্ক্ষিত 'ভ্যালেন্টাইন। কোথাও ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে তরুণ-তরুণীরা তাদের জামার হাতায় কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার মানুষটির নাম লিখে সপ্তাহজুড়ে ঘুরে বেড়াত। তারা ধরেই নিতো, এর ফলে সহজেই কাছে পাবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে।


কোনো কোনো দেশে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে অবিবাহিত ছেলেরা মেয়েদের নতুন পোশাক উপহার হিসেবে পাঠাত এবং মেয়েটি ওই পোশাক গ্রহণ করলে ধরে নেয়া হতো, মেয়েটি তাকে বিয়ে করতে রাজি আছে। ওইসব দেশে কিছু লোকদের ভ্যালেন্টাইনের ওপর বিশ্বাস আরো একধাপ এগিয়ে। তারা বিশ্বাস করত, ১৪ ফেব্রুয়ারিতে যদি কোনো মেয়ে তার মাথার ওপর একটি ফিতা উড়ে যেতে দেখে তাহলে তার বিয়ে হবে কোনো নাবিকের সাথে, যদি সে একটি চড়ুই পাখি দেখে তবে তার বিয়ে হবে একজন দরিদ্র লোকের সাথে, কিন্তু সে হবে খুবই সুখী। আর যদি সে সোনালি রঙের মাছ দেখে তবে তার বিয়ে হবে একজন প্রভাবশালী ধনাঢ্য লোকের সাথে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন সব হাজারো প্রথা, কুসংস্কার ও মিথ জড়িয়ে আছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের কাহিনীকে ঘিরে। ভালোবাসা সব সময়ই সর্বজনীন। আর ভালোবাসার জন্য শুধু ভ্যালেন্টাইন কেন, যুগে যুগে পৃথিবীর বহু দেশে অসংখ্য মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছেন । জয় হোক ভালোবাসার।

ওয়াল্ড অ্যাফেয়ার্স ২৪


Post a Comment

0 Comments

Close Menu