নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ বিস্তার প্রাদুর্ভাব ও প্রতিরোধের উপায়
নিপাহ ভাইরাস কি :
মস্তিষ্কের প্রদাহকে ডাক্তারি ভাষায় এনকেফালাইটিস বলা হয়। ভাইরাস এর মূল ঘাতক। মালয়েশিয়ার 'নিপাহ' নামক গ্রামে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে বলে একে নিপাহ ভাইরাস বলে।
মস্তিষ্কের প্রদাহে নিপাহ ভাইরাস :
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের নিপাহ গ্রামে ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে এক অজ্ঞাত ভাইরাসের আক্রমণে মস্তিষ্কের প্রদাহ ঘটে এবং বেশ কিছু লোক মারা যায়। মূলত শূকরের সংস্পর্শে আসা মানুষজন এতে আক্রান্ত হলেও বাদুড় এই ভাইরাসের প্রকৃত পোষক ও বাহক।
নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার :
রোগতত্ত্বের ভাষায়, হঠাৎ করে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট লোকালয়ে কোনো রোগ বেশি পরিমাণে দেখা দিলে তাকে 'রোগের প্রাদুর্ভাব' বা ডিজিজ আউটব্রেক হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৯৯৮-৯৯ সালে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের পর ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ভারতের শিলিগুড়িতে এক মাসে ৬৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন, যাদের ৭৪ শতাংশ মারা যান এবং এঁদের অধিকাংশই ছিলেন হাসপাতালের স্টাফ এবং রোগীর সংস্পর্শে আসা আত্মীয়স্বজন। তখন থেকেই এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে শুরু করে। এর পরপরই ২০০১ সালের এপ্রিল-মে মাসে বাংলাদেশের মেহেরপুরে প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। পরবর্তী সময়ে বিস্তর গবেষণার পর এটি নিপাহ ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত হয়। এরপর ২০০৩ সালে নওগাঁও, ২০০৪ সালে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে, ২০০৫ সালে টাঙ্গাইলে, ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়ায়, ২০০৮ সালে মানিকগঞ্জে, ২০১০ সালে ফরিদপুরে এবং এ বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় এ রোগ দেখা দেয়। ৩১ জানুয়ারি ২০১১ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৫২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১১৩ জন মারা গেছেন। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ থেকে শুরু হওয়া নিপাহ ভাইরাসের আক্রমণে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১৭ জন মারা গেছেন। যেভাবে ছড়ায় : নিপাহ একটি ভাইরাসজনিত ভয়াবহ ব্যাধি। বাংলাদেশে মূলত বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। বাদুড়ের লালা, কিংবা মল-মূত্রের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। খেজুর গাছের রস যদি বাদুড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় তবে ওই রস থেকে কিংবা বাদুড়ে খেয়েছে এমন ফল থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
নিপা ভাইরাসের লক্ষণ কী :
তীব্র জ্বরসহ মাথাব্যথা, কাশি, পেটে ব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ বকা এবং বমি ও চোখে অন্ধকার দেখাসহ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এই রোগের লক্ষণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়, উচ্চরক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। চিকিৎসা : নিপাহ ভাইরাসের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিকারমূলক চিকিৎসা নেই, লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হয়। নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে প্রেরণ করা প্রাথমিক কাজ । রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক রাখা ও দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিপা ভাইরাস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় :
→ যে এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় বা দিয়েছে সেসব এলাকায় বাদুড় এবং শূকরের (যদি থাকে) সংস্পর্শ থেকে সাবধান থাকতে হবে। খেজুরের কাঁচা রস বর্জন করতে হবে।
→বাদুড়ে খাওয়া কোনো ধরনের আংশিক ফল খাওয়া যাবে না।
→যে কোনো কাঁচা ফলমূল পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে।
→ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে সাবান-পানি দিয়ে দুই হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
→ রোগীর সেবাযত্ন করার সময় সম্ভব হলে মুখ ঢেকে ও হাতে গ্লাভস পরে নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে সাবান-পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নেবেন।
→ হঠাৎ কোনো একজন আক্রান্ত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
একটু পরিবেশ-সচেতন হলে আমরা প্রাণিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই থেকে সহজে বাঁচতে পারি।
0 Comments